,

চা সম্পর্কে যা জানা জরুরি

সময় ডেস্ক : দৈনন্দিন জীবনে পানীয় হিসেবে চা অনেকেরই পছন্দ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক গবেষনার তথ্য মতে, পানির পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পান করা তরল পদার্থ হলো চা। ক্লান্তি দূর করার জন্য চা অনেকেরই নিত্যসঙ্গী। এর পাশাপাশি চায়ের রয়েছে ব্যাপক স্বাস্থ্য উপকারিতা। যারা নিয়মিত চা পান করেন, যাদের কাছে বিষয়টি অনেকটাই অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়।
গবেষক ও চিকিৎসকদের কিছু পরামর্শ : খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা উচিৎ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চায়ের সঙ্গে দুধ বা চিনি মিলিয়ে খাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু ২০০২ সালে হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক কাপ চায়ে ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ কমে যায়। আর ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরের ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতাও কমে যায়। এছাড়াও চায়ের মধ্যে দুধ মেশালে ভাস্কুলার সিস্টেমের ওপর উপকারী প্রভাব কমে যায়।
চা খাবার হজমে সহায়তা করে। চায়ের সঙ্গে ভিটামিন সি খেলে এর গুণাগুণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবে পুরোপুরি গরম চায়ের সঙ্গে ভিটামিন সি মেলালে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভিটামিন সি চা খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মেশানো ভালো।
উপকারিতা : ২০০৯ সালের এক গবেষণার তথ্যমতে, প্রতিদিন চা পান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান বিপাকে সহায়তা করে যা শরীরে ইনসুলিন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে বাঁচায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চা গ্রহণের পর শরীর থেকে ১৫ শতাংশ ইনসুলিন বের হয়। চা পানের আরেকটি স্বাস্থ্যউপকারিতা হলো এটি হৃদপিন্ড ভালো রাখে। নেদারল্যান্ডে ১৩ বছরব্যাপী করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিন্ডকে ভালো রাখে এবং দিনে ৬ কাপের বেশি চা পান করা ব্যক্তিদের হৃদরোগের শঙ্কা এক-তৃতীয়াংশ কম অন্যদের তুলনায়। চায়ে থাকা পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ক্যাটেচিন নামক উপাদানের উপস্থিতি শরীরে ফ্রি রেডিকেলস তৈরিতে বাঁধা দেয় যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়া পলিফেনসেল উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও সাহায্য করে। মানসিক চাপে শরীরে অক্সাইডস নামের এক ধরনের উপাদান সৃষ্টি হয়। চা থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট অক্সাইডসগুলোকে ধ্বংস করে। ফলে মানসিক চাপ কমে। এছাড়া চা শরীর ও মনকে সতেজ করে তোলে।
ক্ষতিকর দিক : যেকোনো কিছুর মতোই চা-ও অতিরিক্ত পান করা ঠিক না। পরিমাণের চেয়ে বেশি চা গ্রহণ করা হলে শারীরিক নানা জটিলতার মুখেও পড়তে হতে পারে। অতিরিক্ত চা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রবন্ধে বেশ কিছু দিক উল্লেখ করা হয়েছে। ঘুমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে উদ্বেগ ও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের চা পান সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। চায়ে উপস্থিত ক্যাফেইন ভ্রুণের বিকাশে বাধা প্রধান করতে পারে যেটা পরবর্তীতে গর্ভপাত ঘটাতে পারে। চায়ের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো অতিরিক্ত চা পান প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। চায়ের ক্যাফেইন ঘুমের চক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত চা পান ঘুমের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। চায়ের মধ্যে থাকা থিওফাইলিন নামে একটি রাসায়নিক উপাদান শরীরে ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে যেটা হজমে সমস্যা তৈরি করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।


     এই বিভাগের আরো খবর